|
---|
আফগানিস্তানের সঙ্গে জলপথে বা স্থলপথে আমাদের কোনও সীমান্ত নেই। ওই দেশে যেতে হলে পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমরা আফগানিস্তানে সব রকম সাহায্য পাঠাব তাই ইরানের চা–বাহারে একটা আস্ত বন্দর গড়ে তুলছি। অথচ বিজেপি যে তিনটি দেশে মুসলমানদের হাতে হিন্দুরা নির্যাতিত শুধু সেই হিন্দুদের দেশের নাগরিকত্ব দিতে বদ্ধপরিকর। এই তিনটি দেশ পূর্বে বাংলা, পশ্চিমে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। হিন্দুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে যেমন জৈন, বৌদ্ধ, শিখ, পারসি (জরাথ্রুষ্টবাদী), খ্রিস্টানদেরও নাগরিকত্ব দেবে বিজেপি–র জগাই–মাধাই মোদি ও শাহ।
পুরো ব্যাপারটায় সন্দেহজনক গন্ধ পেয়ে প্রথমে অসমিয়ারা পরে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জি ও তারপর কংগ্রেস এবং অধিকাংশ আঞ্চলিক দল এই আইনের বিরোধিতায় আজ মুখর। ক্যা বা সিআইআই ইতিমধ্যে সংসদে পাশ হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সইও করে দিয়েছেন। তবু কংগ্রেস, মমতা ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলের বিরোধিতায় আজ বিপাকে জগাই–মাধাই। কারণ এটা ২০১৭ নয়, যখন ভারতের ৭১% স্থলভূমি ও গরিষ্ঠ জনসংখ্যা তাদের শাসনাধীন ছিল। ২০১৯–এর শেষে সেই স্থলভূমি কমতে কমতে গোটা দেশের ৩৫% এবং জনসংখ্যাও ৪০ শতাংশের নীচে। এই ভণ্ড দেশপ্রেমিকদ্বয় দেশটাকেই টুকরো টুকরো করতে আজ উদ্যত।
কেন ভণ্ড বলেছি। জবাবদিহি করছি। সংখ্যালঘুর ও সংখ্যাগুরুর অত্যাচার ওই তিনটি দেশের একচেটিয়া নয়। মোদি কি ভুলে গেলেন এই সেদিন নেপালের সংবিধানে ‘মদেশিয়া’–দের গুরুত্ব অনুযায়ী স্থান না হওয়ায় তারা আন্দোলনে নেমেছিলেন। শান্তিপূর্ণ সেই আন্দোলন ভাঙার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ নেপালি–হিন্দুরা তাদের মার মার করে বিহারে ও উত্তরপ্রদেশে পাঠিয়ে দেয়। এই মদেশিয়ারা ওই বিহার, ইউপির যে হিন্দুরা ভারত–নেপাল সীমান্তে নেপালে একদিন আশ্রয় নিয়েছিল তাদের বংশধর। দুই দেশের মাঝে বা মধ্যবর্তী দেশের লোক বলে এদের বলা হয় মদেশিয়া। মোদি সেদিন হিন্দু–নেপালিদের ঠান্ডা করার জন্য এদেশ থেকে নেপালে পেট্রোল, ডিজেলের চালান মাস ৩/৪–এর জন্য আটকে দেন। নেপালের প্রধান বন্দর কলকাতা। সেই বন্দর ছুঁয়ে তাদের দেশে যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যায়, সব সাপ্লাই বন্ধ। নেপাল ল্যান্ড–লকড দেশ। নেপাল শেষে মদেশিয়াদের স্বার্থ দেখা হবে সংবিধানে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেহাই পায়। তাই ভারত নয়, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির বন্ধুরাষ্ট্র আজ চীন। চীনের সঙ্গে ঘোর দোস্তি আজ নেপালের।
শ্রীলঙ্কায় সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরা। দেশটির উত্তরপূর্বে ঐতিহাসিক কারণেই একদা তামিলনাড়ু থেকে হিন্দুদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওদের প্ল্যান্টেশন ইন্ডাস্ট্রি, চা–শিল্প গড়ে তোলার জন্য। অথচ শ্রীলঙ্কার সংবিধানে বৌদ্ধদের একচেটিয়া আধিপত্য। এর প্রতিবাদে শ্রীলঙ্কার তাবৎ তামিল সংগঠন আন্দোলনে নামে। কেউ অহিংস, কেউ বা সহিংস পথে। সহিংস আন্দোলনের মুখ ছিল প্রভাকরণ। বৌদ্ধ রাজাপক্ষের সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তারের সুযোগ পেয়েও ধরেনি। সরাসরি খুন করে। ফলে, আজ ৬৩০০০ হিন্দু তামিল যারা আসলে শ্রীলঙ্কার বাসিন্দা তার স্বদেশ তামিলনাড়ুতেই আজ উদ্বাস্তু। তাদের থাকা, খাওয়া, পরার তাবৎ খরচ দিল্লির। মোদি এসব জানেন, জানেন তাঁর সাঙ্কোপাঞ্জা অমিত শাহও। তবু বৌদ্ধ ও হিন্দুদের তারা নির্যাতিত বলে দেখিয়েছেন।
আর বৌদ্ধ মায়ানমারে মুসলমান রোহিঙ্গারা বিপন্ন বলেই তাদের একাংশ বাংলাদেশ হয়ে ভারতে চলে এসেছে।
এই ইতিহাস চোখের সামনে থাকা সত্ত্বেও মোদি–শাহ সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ), অর্থাৎ ‘ক্যা’ দেখিয়ে বলছেন যে সব নির্যাতিত হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ, শিখ, পারসি ও খ্রিস্টান আজ ভারতে রয়েছেন তাদের নাগরিকত্ব দেব। দিন তাহলে তা শ্রীলঙ্কার নির্যাতিত হিন্দু ও, নেপালের নির্যাতিত হিন্দু ও মায়ানমারে মুসলমান রোহিঙ্গারা কেন পাবে না? এ কি রকম কাজির বিচার? কেন মুসলমানরা বাদ ক্যা–র তালিকা থেকে? এর উত্তর দেবে কে?